
বিশেষ প্রতিনিধি (ক্রাইম): হত্যাসহ ৫ মামলায় ফেনীর দক্ষিণাঞ্চলের শীর্ষ সন্ত্রাসী ওমর ফারুক প্রকাশ জামাই ফারুককে কারাগারে প্রেরণ করেছে আদালত।
বুধবার, (৩০ এপ্রিল) ফেনী মডেল থানা থেকে আদলতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাবের সাংবাদিক ওমর ফারুকের উপর হামলার মামলায়, এর আগে মঙ্গলবার রাতে তাকে মহাসড়কের লালপোল থেকে এসআই ফারুক মিয়ার নেতৃত্বে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সাংবাদিক ফারুকের উপর হামলা ছাড়াও ২০০২ সালে মাইজবাড়িয়া গ্রামের মোঃ জাকারিয়ার বাড়িতে চাঁদার দাবীতে হামলা ভাংচুর ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় মামলা নং- ৪৬/০২ ইং, ২০১৪ সালে ফাজিলপুর গ্রামের গোলাম সরোয়ার হত্যাকান্ডে মামলা নং- ৪০/১৪ ইং, একই বছর এসআই হাক্কানী বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে ফেনী মডেল থানার মামলা নং- ৭৬/১৪ ইং ও বিশেষ ট্রাইবুনালের-২৫/১১ নং মামলাসহ মোট ৫টি মামলায় জামাই ফারুককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এছাড়া দাশের পুলের নবী হত্যা মামলার অন্যতম আসামী জামাই ফারুক। ডাকাতি, অস্ত্র মামলাসহ তার বিরুদ্ধে প্রায় ৩৭টি মামলা রয়েছে।
কে এই জামাই ফারুক?
ফেনী সদর উপজেলার যাত্রাসিদ্ধি পূর্ব গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত বাদশা মিয়ার ছেলে ওমর ফারুক প্রকাশ জামাই ফারুক।
পার্শ্ববর্তী ধলিয়া গ্রামে বিয়ে করে ঘর জামাই থাকার কারণে তাকে জামাই ফারুক নামে ডাকা হয়।ধলিয়াতেই সন্ত্রাসের গডফাদার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জামাই ফারুক।
সেখানে হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও ডাকাতিসহ এমন কোন অপকর্ম নেই যা সে করেনি। একে একে ৩৭টি মামলার আসামী হন জামাই ফারুক।
২০০১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তাকে কয়েকবার ক্রস ফায়ারে দেয়ার চেষ্টা চালায় র্যাব। ২০১৪ সালে র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগি সরোয়ারকে হত্যা করায় মামলার ৫ নং আসামী হন জামাই ফারুক।
একপর্যায়ে কালিদহ ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। কিন্তু সন্ত্রাসের কারণে সে পদ থেকেও তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে আলোচিত জামাই ফারুক র্যাবের ক্রসফায়ার থেকে বাঁচতে পাসপোর্টে নিজের নাম পরিবর্তন করে সৌদি আরব পালিয়ে যান।
৫ অগাস্টের পর দেশে ফিরে আবারো বেপরোয়া
জামাই ফারুক:
গত ৫ অগাস্ট ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে আসেন জামাই ফারুক। দেশে ফিরেই বেপরোয়া হয় উঠেন তিনি। নিজেকে স্ব-ঘোষিত বিএনপি নেতা সাজিয়ে নিজ এলাকা কালিদহে সিএনজি চালক, রিকশা চালক, বাস-ট্রাকের হেলপার ও দিন মজুরদের আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে গড়ে তোলেন বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী।
ট্রাক হেলপার সোহাগ ও সিএনজি ড্রাইভার মামুনকে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ২ প্রধান সেনাপতি বানিয়ে, মহাসড়কে ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, জোর করে অন্যের ফসলি জমির মাটি বিক্রি, জমি ও বাড়ি দখলসহ এমন কোন অপকর্ম নেই যা জামাই ফারুক বাহিনী করেনি।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কালিদহ, লেমুয়া, ফাজিলপুর, ছনুয়া ও ধলিয়া এলাকায় ১০/১২টি হুন্ডায় গুন্ডা বাহিনী নিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে অপকর্ম করে বেড়াতো জামাই ফারুক বাহিনী।
জামাই ফারুকের যত অপকর্ম:
জামাই ফারুক ও তার ২ প্রধান সহযোগি সোহাগ আর মামুনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ফেনী সদর দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ।
গত সোমবার স্বয়ং ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জামাই ফারুকের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার বিরুদ্ধে ডজনখানেক অভিযোগ তিনি পেয়েছেন বলে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন। প্রয়োজনে টাস্কফোর্স গঠন করে তাকে গ্রেপ্তার করার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক।
এদিকে গত ২ দিন আগে জামাই ফারুক বাহিনী ও মহিপালের মেট স্বপন বাহিনী প্রতিপক্ষের সাথে আড়াই লাখ টাকা চুক্তিতে গোবিন্দপুরের বেঙ্গল ফারুককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বসতবাড়িসহ জমি জবর করেন।
দাশের পুলের পোল্ট্রি মিজানের কাছে তিন লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে মারধর করে জামাই ফারুক বাহিনী।
অলি মার্কেটের সবুজের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৭০ হাজার, দক্ষিণ গোবিন্দপুরের আইয়ুবের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা আর উত্তর গোবিন্দপুরের বয়রা কোণার জামাল ও তার ছেলেকে চাঁদার দাবীতে মারধর করে জামাই ফারুক বাহিনী।
এছাড়া এলাকার বিভিন্নজনের কাছে চাঁদা দাবী ও মারধর ছিল তার বাহিনীর প্রাত্যহিক রুটিন। মহিপালের ছাত্র হত্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়েও কোটি টাকা হাতিয়ে নেন সন্ত্রাসী জামাই ফারুক।
তার গ্রেপ্তারে এলাকায় স্বস্তি বিরাজ করছে। ভয় ও আতঙ্কে এতদিন মানুষ তার অপকর্মের প্রতিবাদ করার সাহস পায় নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার লোকজন জানান, তার মতো দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করায় তারা খুশি হয়েছেন।
তার বাহিনীর সোহাগ ও মামুনসহ অন্য সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা হলে এলাকায় শান্তি ফিরে আসবে বলে জনগণের অভিমত।